logo
ঢাকাশনিবার , ২৪ মে ২০২৫
  1. সর্বশেষ

সুলতান আলাউদ্দীন খিলজীঃ ভারতবর্ষের ইতিহাসের এক উপেক্ষিত মহানায়ক

প্রতিবেদক
সংবাদ সবসময়
১৫ ডিসেম্বর ২০২০, ৭:৩৭ অপরাহ্ণ

Link Copied!

আজ থেকে প্রায় পৌনে সহস্রাব্দ আগে মঙ্গোলিয়ার তৃণভূমি থেকে তিমুজিন তথা চেঙ্গিস খানের হাত ধরে উঠে আসা মঙ্গোল বা মোঙ্গল নামের খুনী জাতিটি রাশিয়া থেকে ইরাক পর্যন্ত কমসে কম সাত থেকে আট কোটি কিংবা আরও বেশী মানুষকে হত্যা করে; তাদের ধ্বংসযজ্ঞের পিঠে পিঠে আসা দুর্ভিক্ষ, বাস্তুচ্যুতি ইত্যাদি কারণে হারিয়ে যায় আরও অনেক কোটি প্রাণ…কয়েক প্রজন্মব্যাপী মোঙ্গল সাম্রাজ্যের বিস্তৃতিকালে তাদের হাতে সরাসরি প্রাণ খুইয়েছিলো তৎকালীন বিশ্বের মোট ১১ শতাংশ মানুষ।

ঠিক কতোজন মানুষ মোঙ্গলদের হাতে মারা পড়েছিলো, তার একদম নির্ভুল কোন হিসাব কোথাও পাওয়া যায়না। কিন্তু হত্যাযজ্ঞ পরিচালনাকারী মোঙ্গল সেনাপতিবৃন্দ ও সমসাময়িক বিভিন্ন দায়িত্বশীল ব্যক্তির নথিবদ্ধকৃত তথ্য বিশ্লেষণ করলে ইতিহাসবিদদের মতে নিহতের সংখ্যাটি মোটামুটি এরকমই দাঁড়ায়।

চেঙ্গিস খান নিজে ব্যক্তিগতভাবে চার কোটি মত মানুষের মৃত্যুর জন্যে দায়ী বলে ইতিহাসবিদদের ধারণা…
চেঙ্গিস খানের নাতি কুবলাই খান যখন চীন দখল করেছিলো, তখন চীনের জনসংখ্যা প্রায় এক দশমাংশে নেমে এসেছিলো…চেঙ্গিস খানের আরেক নাতি হালাকু খান যখন আব্বাসীয় খলিফা আল মুস্তাসিম বিল্লাহকে পরাজিত করে বাগদাদ দখল করেন, তখন বাগদাদের একটি প্রাণীকেও জীবিত ছাড়া হয়নি। নারী, শিশু, বৃদ্ধ, পাগল এমনকি বাগদাদের একটি কুকুর কিংবা বিড়ালকেও জীবিত রাখেনি হালাকু খানের বাহিনী। তারা বাগদাদের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া তাইগ্রীস তথা দজলা নদীতে এতো পরিমাণে বই ফেলে দিয়েছিলো যে, দজলা নদীর পানি কয়েকদিন ধরে ঘন কালচে রঙ ধারণ করেছিলো।

তারা সব ধ্বংস করে, সবাইকে মেরে ফেলে বাগদাদ ছেড়ে চলে যাবার কয়েকদিন পর আবার অকস্মাৎ ফেরত আসে, যেসব মানুষ এদিক-সেদিক লুকিয়ে প্রাণে বেঁচেছিলো- তাদেরকে খুঁজেপেতে হত্যা করার জন্যে।

চেঙ্গিস খান, সুবোতাই, অগেডাই, হালাকু খান, কুবলাই খান, চাগাডাই, মংকে খান এরা রক্ত দিয়ে বিশ্বের ইতিহাস নতুন করে লিখেছিলেন। মোঙ্গলরা কোন ধর্মীয় বিশ্বাসের বশবর্তী হয়ে মানুষ খুন করতো, এমন না। মোঙ্গলরা সম্পূর্ণ ধর্মনিরপেক্ষ শাসনপ্রক্রিয়ায় চালিত একটি মেধাভিত্তিক ও বহুজাতিক সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত করেছিলো।

মোঙ্গলরা জাতিগোষ্ঠী হিসেবেই মূলত ‘স্যাডিস্ট’ একটি জাতি ছিলো। এমন অনেকবার হয়েছে যে, তারা প্রতিপক্ষ সৈন্যদলকে পরাজিত করার পর সেনাপতিদেরকে হাত-পা বেঁধে জীবিত শুইয়ে রেখে তাদের ওপর কাঠের পাটাতন বিছিয়ে নিজেরা সবাই মিলে ভূরিভোজ করতো, এতে পাটাতনের নিচে মানুষগুলো ভোজনরত মোঙ্গলদের ওজনে নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে চিড়েচ্যাপ্টা হয়ে ধীরে ধীরে নিদারুণ কষ্ট পেয়ে মৃত্যুবরণ করতো। খাবার সময় নিজেদের ভারে মৃত্যুরত বন্দীদের আর্তনাদ শুনে পৈশাচিক আনন্দ অনুভব করতো মোঙ্গলরা।

ইতিহাসের অন্যান্য সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো কোন দেশ জবরদখল করে খুনোখুনি করার পর এক পর্যায়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা করে,খাজনা তুলে, আইন-আদালত কায়েম করে- এমনটিই দেখা গিয়েছে।
কিন্তু মোঙ্গলদের নীতি ছিলো একটিই- হয় অন্য রাজ্যগুলো তাদেরকে বিপুল পরিমাণে খাজনা দিয়ে টিকে থাকবে, নাহলে সে রাজ্যের বিড়াল-কুকুর-লাইব্রেরী-মসজিদ-মন্দির পর্যন্ত ধূলোয় মিশিয়ে দেয়া হবে; তাদেরকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলা হবে।

চেঙ্গিস খানের নাতি কুবলাই খান অবশ্য এক্ষেত্রে কিছুটা ব্যতিক্রম ছিলেন। তিনি চীন দখল করে ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর পর সেখানকার উন্নয়ন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার দিকে মনোযোগ দিয়েছিলেন।

মোঙ্গলরা তাদের ইতিহাসে প্রথম পরাজয় বরণ করে তৎকালীন মিশরের মামলুক সালতানাতের সুলতান কুতুজের নিকট; ‘আইন জালুত’ নামক স্থানে সংঘটিত যুদ্ধে। এ যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন অঘুজ তুর্কীক বংশোদ্ভূত সেনাপতি রোকনুদ্দিন বাইবার্স, যিনি নিজেও পরবর্তীতে মামলুক সালতানাতের সিংহাসনে আরোহন করেন এবং মঙ্গোলদেরকে আরও কয়েকটি ফ্রন্টে পরাজয়ের স্বাদ আস্বাদন করান। এই ‘আইন জালুত’ যুদ্ধ ইতিহাসের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং মোড় ঘুরিয়ে দেয়া যুদ্ধ। এই যুদ্ধের কারণেই পশ্চিম অভিমুখে মোঙ্গলদের জয়রথ থেমে যায় এবং ইউরোপ-আফ্রিকা মোঙ্গলদের গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ থেকে রক্ষা পায়। এই পরাজয়ের আগে মোঙ্গল সাম্রাজ্যের শুরুর পর থেকে ৫৬ বছর মোঙ্গলরা একটি যুদ্ধেও হারেনি…এই যুদ্ধ বিশ্ববাসীকে “মোঙ্গলরা ঈশ্বরের অভিশাপ, ওদেরকে হারানো সম্ভব না”, ” মোঙ্গলরা এমন কোন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেনা, যাতে তারা জিততে পারেনা”- এসব বদ্ধমূল বিশ্বাস থেকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করেছিলো।

এখন যারা মোঙ্গলদের সম্পর্কে এসব কথা নতুন শুনছেন, তাদের মনে এই প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক যে- মোঙ্গলরা রাশিয়া থেকে বাগদাদ পর্যন্ত একেরপর এক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে গেলো, অথচ তারা তৎকালীন পৃথিবীর রত্নভাণ্ডার ভারতবর্ষ দখল করেনি কেন?
অবশ্যই মোঙ্গলরা ভারতবর্ষও দখল করা চেষ্টা করেছে। তবে যে ব্যক্তি একবার বা দু’বার নয়- ছয়বার মোঙ্গলদের আক্রমণ ঠেকিয়ে দিয়ে সমগ্র ভারতবর্ষের মহাশ্মশানে পরিণত হওয়া ঠেকিয়েছিলেন, তাঁর নাম সুলতান আলাউদ্দীন খিলজী…দিল্লীর সুলতান, মহান বীর আলাউদ্দীন খিলজি।

সুলতান আলাউদ্দীন খিলজী’র শাসনামলে বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত চারটি আলাদা মোঙ্গল খানাতের একটি ‘চাকাডাই খানাত’-এর অধিপতি দুয়া খান প্রথমবার ১২৯৮ সালে এক লক্ষ ঘোড়সওয়ার বাহিনী নিয়ে ভারতবর্ষ আক্রমণ করেন। উল্লেখ্য, মঙ্গোলদের সবচেয়ে দক্ষতার জায়গা ছিলো ঘোরসওয়ারী; তারা দ্রুতগতি’র ঘোড়ার পিঠে ধাবমান অবস্থায় নিখুঁতভাবে তীর, তরবারী ও বর্শা চালনায় সিদ্ধহস্ত ছিলো। যাই হোক, মোঙ্গলদের এই আক্রমণ ঠেকানোর জন্য সুলতান আলাউদ্দীন খিলজী তার ভাই উলুগ খান এবং সেনাপতি জাফর খানের নেতৃত্বে সৈন্যদল প্রেরণ করেন। এই যুদ্ধে মোঙ্গলরা শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয় এবং বিশ হাজার মোঙ্গল সৈন্যকে আটকের পর হত্যা করা হয়।

এর পরের বছরেই মোঙ্গলরা সিন্ধু আক্রমণ করে সালতানাতের অধীনস্ত সিভাস্তান দূর্গ দখল করে নেয়। এবারেও সুলতান আলাউদ্দীন খিলজী তার বিশ্বস্ত সেনাপতি জাফর খানকে পাঠান শত্রু খেদিয়ে দূর্গ পুনরুদ্ধার করতে। জাফর খান ঠিকই মোঙ্গলদেরকে হারিয়ে সিভাস্তান দূর্গ পুনরুদ্ধার করলেন কোন অবরোধের যন্ত্র (ক্যাটাপুল্ট/মিনজানিক, সিজ টাওয়ার) ব্যবহার না করেই।

পরপর দুইবার লজ্জাজনক পরাজয়ে ক্ষুব্ধ দুয়া খান ১২৯৯ সালে আবারও বিশাল সেনাবাহিনী প্রেরণ করলেন দিল্লীর সালতানাত উৎখাত করে একে জনশূণ্য বিরানিভূমিতে পরিণত করতে। এবারের প্রেরিত মোঙ্গল হানাদার সৈন্যদলের নেতৃত্বে ছিলো দুয়া খানের ছেলে কুতুলুঘ খাজা; সাথে ছিলো দুই লক্ষাধিক অশ্বারোহী ও পদাতিক সৈন্য। তারা এবার দীর্ঘসময় যুদ্ধ করার সব প্রস্তুতি নিয়েই এসেছিলো; বিপুল পরিমাণে খাদ্য ও রসদপত্র সহযোগে। ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে আসা মোঙ্গলদের সৈন্য-সামন্তের বহর দেখে সুলতান আলাউদ্দীনের উজির-আমির-উমরা’রাও ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন এবং সুলতানকে বারংবার প্ররোচিত করছিলেন আত্মসমর্পণ করার জন্য। কিন্তু সুলতান মোঙ্গলদেরকে মোকাবেলা করার সিদ্ধান্ত নিলেন এবং ‘কিলি’ নামক স্থানে তাদের মুখোমুখি হন এবং বিজয়ী হন। মারাত্মকভাবে আহত কুতুলুঘ খাজা তার সেনাবাহিনী নিয়ে পথে কোথাও বিরতি না নিয়েই মঙ্গোলিয়া পালিয়ে যান।

প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ জিয়াউদ্দীন বারানী সে যুদ্ধে দিল্লীর সালতানাতের জয়ের পেছনের কারণ হিসেবে সেনাপতি জাফর খানের অসীম বীরত্ব এবং শাহাদাতকে উল্লেখ করেন। হ্যাঁ, এই যুদ্ধে সুলতান আলাউদ্দীন খিলজী’র বিশ্বস্ত সেনাপতি বীর যোদ্ধা জাফর খান শহীদ হন; আবারও গণহত্যার হাত থেকে রক্ষা পায় ভারতবর্ষ।

১৩০৩ খৃষ্টাব্দে দুয়া খান আবারও এক লক্ষ বিশ হাজার সৈন্য সম্বলিত বাহিনী প্রেরণ করেন দিল্লী দখল করতে। এ সময় সুলতান আলাউদ্দীন খিলজী সবেমাত্রই এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে চিতোর জয় করেন। প্রতিটি যুদ্ধের পর সেনাবাহিনীকে পুনর্গঠন করতে যে সময়টুকু লাগে, সেটিকেই কাজে লাগাতে এই আকস্মিক আক্রমণ করে বসেন দুয়া খান। এবারে মোঙ্গল বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন সেনাপতি তারাঘাই। তারা সালতানাতের অন্য রাজ্যসমূহ থেকে দিল্লীতে রসদ সরবরাহের সব পথ অবরুদ্ধ করে সুলতানের বাহিনীকে কোনঠাসা করে ফেলে। এমন অবস্থাতেও সুলতান আলাউদ্দীন নিজের সেনাবাহিনীর অবস্থানের চারদিকে পরিখা খনন করা সহ আরও নানাবিধ রক্ষণাত্মক পদ্ধতি ব্যবহার করে তারাঘাইয়ের বাহিনীর বিরুদ্ধে টানা দুই মাস রক্ষণাত্মক যুদ্ধ চালিয়ে যান। দুই মাস চেষ্টার পর এবারেও দিল্লী দখল করতে ব্যার্থ হয়ে ফিরে যায় মোঙ্গল বাহিনী।

আগের ক্রমাগত পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে ১৩০৫ সালে সেনাপতি তারাঘাই, আলী বেগ এবং তারতাকের নেতৃত্বে আবার মোঙ্গলরা পঞ্চাশ হাজার অশ্বারোহী নিয়ে ভারতবর্ষ আক্রমণ করে। এবারে দিল্লী পৌঁছানোর আগেই পথিমধ্যে প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়ে প্রাণ হারান তারাঘাই, বাকি দুই সেনাপতি আলী বেগ ও তারতাক দিল্লীর অভিমুখে অগ্রসর হন সেনাবাহিনী নিয়ে। দিল্লীতে অভিযান দীর্ঘায়িত করার মানসে রসদ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে মোঙ্গলরা দিল্লীর নিকটবর্তী আবাদ নামক অঞ্চলে ব্যাপক লুঠতরাজ ও হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। তাদেরকে ঠেকাতে সুলতান আলাউদ্দীন তাঁর সেনাপতি মালিক নায়েককে প্রেরণ করেন ত্রিশ থেকে চল্লিশ হাজার অশ্বারোহী সৈন্যের সাথে। ১৩০৫ সালে সেনাপতি মালিক নায়েক মোঙ্গলদেরকে বর্তমান উত্তর প্রদেশের আমরোহা নামক স্থানে শোচনীয়ভাবে পরাজিত করেন…কব্জা করা হয় শত্রুপক্ষের বিশ হাজার ঘোড়া। দুই সেনাপতি আলী বেগ ও তারতাকসহ আট হাজার মোঙ্গল সৈন্যকে গ্রেপ্তার করে দিল্লীতে সুলতান আলাউদ্দীনের সামনে নিয়ে আসা হয় এবং তাদের সবাইকেই শিরশ্ছেদ করে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। এ বিষয়ে অবশ্য ইতিহাসবিদদের মতভেদ আছে। তাদের অনেকের মতে আলী বেগ, তারাতাক এবং তাদের অধীনস্থ মঙ্গোল সৈন্যদেরকে গ্রেপ্তারের পর সুলতান আলাউদ্দীন নিজের সেনাবাহিনীর উচ্চপদে আসীন করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে বিভিন্ন ঘটনাক্রমে তাদের বৈরীতা প্রকাশ পেলে সবাইকে হাতির পায়ের নিচে পিষে হত্যার নির্দেশ দেন সুলতান।

১৩০৬ সালে দুয়া খান শেষবারের মতন চেষ্টা করেন দিল্লী দখল করার। এবার তিনি মোট ষাট হাজার অশ্বারোহী সম্বলিত সেনাবাহিনীকে দু’টো আলাদা ভাগে দিল্লীর পানে প্রেরণ করেন দুই সেনাপতি কুবাক এবং ইকবালমান্দের নেতৃত্বে। কুবাক তার সৈন্যদল নিয়ে রবি নদী’র দিকে অগ্রসর হতে থাকেন, আর ইকবালমান্দ রওনা হতে থাকেন নাগর নামক স্থানের দিকে। এবার সুলতান আলাউদ্দীন তাঁর বিশ্বস্ত সেনাপতি মালিক কাফুরকে প্রেরণ করেন অগ্রসরমান মোঙ্গল বাহিনীকে দমন করতে। মালিক কাফুর কুবাকের সৈন্যদলকে রবি’র যুদ্ধে পরাজিত করেন এবং কুবাককে জ্যান্ত গ্রেপ্তার করেন। এরপর তিনি নাগর অভিমুখে ইকবালমান্দের বাহিনীকেও ধাওয়া করে পরাজিত করেন। আক্রমণকারী ষাট হাজার মোঙ্গল সৈন্যের মধ্যে মাতে তিন থেকে চার হাজার সৈন্য প্রাণ নিয়ে ফেরত যেতে পেরেছিলো সেবার।

ভারতবর্ষের সুলতান আলাউদ্দীন এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন যা পৃথিবীতে কোন শাসক বা কোন সেনাপতি আর কখনও করে দেখাতে পারেনি; তিনি বারংবার পূর্ণ শক্তিতে আক্রমণ করা মোঙ্গল সেনাবাহিনীকে পরাজিত করে দেখালেন। রাশিয়া, চীন, পারস্য, বাগদাদ, ইউরোপ ও এশিয়া মাইনর নরকের যে অগ্নির বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারেনি, সেই মোঙ্গল আগুন ছয় ছয়বার নিভে গিয়েছে সুলতান আলাউদ্দীনের কাছে। সুলতান আলাউদ্দীন সর্বোচ্চ দুই লক্ষ সৈন্য সংবলিত মোঙ্গল বাহিনীকেও পরাস্ত করেছিলেন, যেখানে হালাকু খান দেড় লক্ষ সৈন্য নিয়ে বাগদাদে গিয়ে আব্বাসীয় খেলাফতের শাসনাধীন বাগদাদ নগরীকে নরকগুলজারে পরিণত করেছিলেন।

বর্তমানে ভারতের ক্ষমতাসীন হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার বলিউডের চলচ্চিত্রশিল্পকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে শুধুমাত্র মুসলমান শাসক হবার কারণে বিভিন্নভাবে সুলতান আলাউদ্দীন খিলজী’র চরিত্রহনন করার চেষ্টা করছে; ভয়ানক ইতিহাসবিকৃতি ঘটিয়ে তাঁকে নারীলোভী, উন্মত্ত, রক্তপিপাসু, কাপুরুষ ও বিকৃত যৌনাচারী হিসেবে নতুন প্রজন্মের সামনে দাঁড় করাতে চাচ্ছে। যার কারণে খোদ ভারতসহ সারা বিশ্বের ইতিহাসবিদ এবং ইতিহাসসচেতন সাধারণ ব্যক্তিবরর্গের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে, খোদ ভারতীয় নেটিজেনরাই উক্ত চলচ্চিত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সরব হয়েছিলেন অনলাইনে। ইতিহাসের ভাষ্যমতে সুলতান আলাউদ্দীন খিলজী বেশ কঠোর একজন শাসক ছিলেন। কিন্তু মোঙ্গলরা তাদের ছয়বারের চেষ্টায় একবারও যদি সুলতান আলাউদ্দীন খিলজীকে পরাজিত করে দিল্লী তথা ভারতবর্ষ দখল করতে পারতো, তবে আজকের ভারতের চেহারা অন্যরকম হতো। ভারতবর্ষের হাজার বছরের প্রাচীন জ্ঞান-বিজ্ঞান, গণিতশাস্ত্র, আয়ুর্বেদ এবং ধনভাণ্ডার বাগদাদের লাইব্রেরী এবং খিলাফতের রাজকীয় কোষাগারের মতো চিরতরে কালের গহবরে হারিয়ে যেতো।

লেখকঃ-
মোহাম্মদ হায়সম আফতাব ইভান
গবেষণা সহকারী, ব্র‍্যাক জেপিজিএসপিএইচ, ব্র‍্যাক বিশ্ববিদ্যালয়।
বিএসএস,এমএসএস,আন্তর্জাতিক-সম্পর্ক,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

আরও পড়ুন

ঢাকায় ধরা সোনাপাচার-হুন্ডির ‘বস’ চট্টগ্রামের আবু, একদশকে হাজার কোটির মালিক

এবি পার্টিতে যোগদান করলেন বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের দেড়’শ ছাত্রনেতা

সাতকানিয়া কেঁওচিয়ায় ওয়ার্ড বিএনপির মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত

সিলেট ও সুনামগঞ্জের সব পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ ঘোঘণা

সাতকানিয়ায় এওচিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা

বাজালিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের নব কমিটির সভাপতি রিফন সাধারণ সম্পাদক অমি

আবারও রেড ক্রিসেন্ট ট্রেজারার নির্বাচিত হলেন বিশিষ্ট শিল্পপতি আবদুস সালাম

স্বাধীনতা পদক পেলেন বিশিষ্ট শিল্পপতি আবদুস সালাম

কাপ্তাই পাল্পউড বাগান বিভাগ টহলদল জ্বালানি কাঠসহ পিকআপ আটক

সাতকানিয়ায় পশ্চিম ঢেমশা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা

কুমিল্লায় ট্রেন লাইনচ্যুতির ঘটনায় তদন্ত কমিটি, স্বাভাবিক হয়নি ট্রেন চলাচল