ইকবাল মুন্না: দূর্ঘটনা হলে উপস্থিত জনতা দূর্ঘটনার কবলিত মানুষ’কে উদ্ধারে ব্যস্থ থাকে এটা স্বাভাবিক। কিন্তু দূর্ঘটনা গুরুতর আহত এবং ঘটনাস্থলে মৃত্যুবরণ করা ব্যক্তির পকেটে থেকে মোবাইল চুরি বিষয়টি খুবই মর্মাহত।
গত বুধবার(২১ই শে জুন) রাত সাড়ে ১১টায় শাহ আমানত সেতুর টোল বক্স এলাকায় ঔষুধ কোম্পানির গাড়ির চাপায় পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুবরন করেছেন গিয়াস উদ্দিন(৩২)। তিনি সাতকানিয়া পৌরসভা ৯ নম্বর ওয়ার্ড খলিফা পাড়া এলাকার আবদুর শুক্কুরের ছেলে এবং চট্টগ্রাম নগরীর শপিং সেন্টারে কাপড় ব্যবসায়ী।
ঘটনার দিন একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায় গাড়ি চাপায় নিহত গিয়াস’কে যখন স্থানীয়রা যখন উদ্ধার ব্যস্থ এসময় এক ব্যক্তি তার প্যান্টের পকেটে থাকা ১’লাখ ৬০’হাজার টাকা দামের আইফোন ১৩ প্রো ম্যাক্স মডেলের মোবাইল’টি চুরি করে নিয়ে যায়।তবে প্রশ্ন এমন, যদি মানবতার বিলুপ্তি হয় তাহলে মনুষ্যত্ব কি আদৌ বেঁচে থাকবে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি এন্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আমরা মানুষ হিসাবে কয়েক ভাবেই বেড়ে উঠি। একটি দূর্ঘটনা যখন হয় তখন মানুষটি উদ্ধার করার সময় তার পকেটে থাকা মোবাইল চুরির বিষয়টি খুবই মর্মাহত। মানবিকতার যে চর্চা সেটা আমাদের মাঝে বলতে গেলে নেই। মৃত্যুবরণ করা ব্যক্তির কাছ থেকে মোবাইলটি চুরি হয়েছে কারণ ওই মুহুর্তে তার স্বজনরা সাথে ছিল না আর যে চুরি করেছে তার মনে হল নগদ টাকার চেয়ে মোবাইলটি দামি হবে তাই সে চুরি করেছে। মানুষ সুযোগ পেলেই অপরাধে জড়ায়। বিচার বিভাগ’কে কঠোর হতে হবে এবং পারিবারিক শিক্ষা এবং অপরাধ করার স্থানগুলোতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করলে মানুষ এমন হেয় কর্ম থেকে বিরত থাকবে
নিহতের ভাই শামশুল ইসলাম বলেন, ঘটনার দিন রাতে সাতকানিয়া থেকে মোটরসাইকেলে চট্টগ্রাম নগরীতে যাওয়ার পথে ঔষুধ কোম্পানির গাড়ি চাপা আমার ভাই মারা যায়। ওই সময় তার সাথে থাকা মোবাইল’টি স্থানীয় কেউ একজন পকেট থেকে নিয়ে ফেলে।আমি বিষয়টি জিডি করবো মোবাইল হারানোর।অভাক লেগেছে যে একটু মৃত্যুবরণ করা মানুষের মোবাইল কেমনে নিতে পারে।
কর্ণফুলী জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) মো. আরিফ হোসেন জানান,কোন গাড়ি দূর্ঘটনার কবলে পড়লে উপস্থিত কেউ তাদের উদ্ধার করতে যায় আবার কেউ কেউ দূর্ঘটনা কবলিত মানুষের মানিব্যাগ মোবাইল বা অন্যান্য অনেক কিছু চুরি করতে যায়।
নিহত গিয়াসের মোবাইল চুরির বিষয়টি খুবই ন্যক্কারজনক এবং অভিযোগের ভিত্তিতে দোষীকে শনাক্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, মৃত্যুপথযাত্রী বা মৃত্যু বরণ ব্যক্তির কাছ থেকে যে মোবাইল চুরি করতে পারে মূলত সে হিংস্র জানোয়ারের সমান।মানুষ তিন প্রকারের প্রাণী আছে, গৃহপালিত পশু, আমরা সামাজিক জীব আরেকটা হলো হিংস্র জানোয়ার।জানোয়ার কারো পোষে থাকবে না তার কর্ম সে চালাবে। মৃত ব্যক্তির যে চুরি করেছে সে হয়তো মাদক বা নেশাগ্রস্ত না বিকারগ্রস্ত। তার পরিবার থেকে মনুষ্যত্ব বোধের কোন শিক্ষা হয়তো পায়নি। পুলিশের উচিত তাকে চিহ্নিত করে কঠোর আইনে জামিন অযোগ্য ধারা দিয়ে শাস্তি দিতে হবে যাতে গ্রেপ্তারের কয়েকদিনের মাথায় জেল থেকে বের হয়ে এধরনের অপরাধ করার সাহস না করে আবার পুলিশ তাকে এমন কোন স্থানে নিয়ে গিয়ে তাদের অধিনে রেখে অপরাধ সম্পর্ক বিভিন্ন ধারণা নিয়ে ভাল হিসাবে গড়ে তুলতে পারে।