আরমান খান: সর্বশেষ এক শিক্ষার্থীকে বেসরকারি একটি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করিয়ে দেয়ার নাম করে ৬ লাখ টাকা নিয়েছেন এই অতিরিক্ত সচিব। তবে এ পর্যন্ত কতজন শিক্ষার্থীকে ভর্তি করাতে পেরেছেন সে তথ্য এখনও জানা যায়নি। মেডিক্যালে ভর্তি করিয়ে দেয়া ও টাকা লেনদেনের বিষয়ে এই অতিরিক্ত সচিব ও আনিসের কথোপকথনের একাধিক রেকর্ড পেয়েছেন গোয়েন্দারা।
সরকারি-বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে এমবিবিএস কোর্সে ভর্তির নামে প্রতারণায় স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সদ্য সাবেক এক অতিরিক্ত সচিবের সম্পৃক্ততার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তার নাম নিতিশ চন্দ্র সরকার। এস এম আনিস নামে এক দালালের মাধ্যমে তিনি মেডিক্যালে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে প্রতারণা করে আসছিলেন বলে উঠে এসেছে গোয়েন্দা তথ্যে।
সর্বশেষ এক শিক্ষার্থীকে বেসরকারি একটি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করিয়ে দেয়ার নাম করে ৬ লাখ টাকা নিয়েছেন এই অতিরিক্ত সচিব। তবে এ পর্যন্ত কতজন শিক্ষার্থীকে ভর্তি করাতে পেরেছেন সে তথ্য এখনও জানা যায়নি। মেডিক্যালে ভর্তি করিয়ে দেয়া ও টাকা লেনদেনের বিষয়ে এই অতিরিক্ত সচিব ও আনিসের কথোপকথনের একাধিক রেকর্ড পেয়েছেন গোয়েন্দারা।
আনিসের সঙ্গে পরিচয় থাকার কথা স্বীকার করলেও প্রতারণায় জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন নিতিশ চন্দ্র সরকার। তিনি বলেন, ‘টাকা নেয়ার তথ্যটি মিথ্যা।’ আনিসের সঙ্গে কীভাবে পরিচয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ও আমার কাছে আসতো।’ কী কাজে আসতে জিজ্ঞেস করা হলে কোনো উত্তর দেননি নিতিশ চন্দ্র।
বিভিন্ন বেসরকারি মেডিক্যালের অধ্যক্ষকে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য সিট সংরক্ষণ করার আবেদন করতেন আনিস। আর এসব মেডিক্যাল কলেজের সংশ্লিষ্টদের মৌখিকভাবে বলে দিতেন নিতিশ। এই কাজটি করার জন্য আনিসের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিতেন তিনি।
টাকা লেনদেন বিষয়ে জানতে চাইলে নিতিশ চন্দ্র বলেন, ‘ভর্তি কি হইছে? হয় নাই, তাইলে… এসব মিথ্যে কথা।’
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের লালবাগ বিভাগ জানিয়েছে, আনিস ও অতিরিক্ত সচিব ছাড়া আরও একজন এই চক্রে কাজ করেন। তার নাম জাহিদ; যিনি দীর্ঘদিন ধরে মেডিক্যালে ভর্তির নামে প্রতারণা করে আসছে। তিনি বর্তমানে লন্ডনে আছেন।
শুক্রবার রাজধানীর মণিপুরিপাড়া থেকে আনিসকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) লালবাগ বিভাগ। তার হেফাজত থেকে ২০২৩ সালের চলমান এমবিবিএস পরীক্ষার অনেকগুলো অ্যাডমিট কার্ড, পূর্ববর্তী এমবিবিএস পরীক্ষার এডমিট কার্ড, বিভিন্ন ব্যাংকের শতাধিক চেক, পুলিশ কনস্টেবল প্রার্থীর এডমিট কার্ড, বিভিন্ন লিখিত ও অলিখিত নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প, একাধিক প্যাড, পাঁচটি ডিজিটাল এবং সনাতন স্ট্যাম্প, সিল এবং একটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তার আনিসের বরাত দিয়ে ডিবি কর্মকর্তারা জানান, এএসসি পাস করা আনিস এক সময় জুট মিলে কাজ করতেন। একসময় ফার্মগেট ও গ্রিনরোড এলাকায় ভর্তি পরীক্ষার ফর্ম বিক্রি করতেন। এক পর্যায়ে তিনি জড়িয়ে যান মেডিক্যালে ভর্তি করিয়ে দেয়ার প্রতারণায়।
মেডিক্যালে ভর্তি করিয়ে দেয়ার নামে প্রতারণার উদ্দেশে সিটি কর্পোরেশন থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে একটি কনসালটেন্সি ফার্মও খুলে বসেন আনিস। আগে থেকে এই প্রতারণার কাজটি করে আসছিলেন জাহিদ। এই জাহিদের মাধ্যমে আনিসের সঙ্গে সদ্য সাবেক অতিরিক্ত সচিবের সঙ্গে যোগাযোগ হয় বলে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন।
আনিসের ভাষ্যমতে, শিক্ষার্থী সংগ্রহের কাজটি করতেন আনিস। আর বেসরকারি মেডিক্যালগুলোতে ভর্তির জন্য সংশ্লিষ্ট মেডিক্যালে ফোন করে বলে দিতেন এসব মেডিক্যালের তদারকির দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত সচিব।
অতিরিক্ত সচিব থাকা অবস্থায় অন্তত ৩০ বার বিভিন্ন কাজে আনিস মন্ত্রণালয়ে গিয়েছেন বলে গোয়েন্দাদের জানিয়েছেন আনিস। আর মন্ত্রণালয়ে প্রবেশের জন্য আনিসকে পাসের ব্যবস্থাও করে দিতেন এই অতিরিক্ত সচিব।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান ও অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ বলেন, ‘আসলে আনিসের নেতৃত্বাধীন এই চক্রে একজন সদ্য অবসরে যাওয়া সরকারের একজন কর্মকর্তার নাম এসেছে। তবে আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখছি।’
মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি ছাড়াও বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় দালালি ও প্রতারণা বাণিজ্য করে আনিস ইতোমধ্যে দুইটি হোটেল এবং মনিপুরিপাড়ায় একটি বিলাসবহুল ফ্লাটের মালিক হয়েছে বলে তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দারা।
তারা বলছেন, চলমান এমবিবিএস পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সক্ষমতা তার ছিল না কিন্তু এই পরীক্ষার নামে বিস্তর প্রতারণার জাল তিনি বিভিন্ন মাধ্যমে বিস্তার করেছেন।
ডিবি লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার মশিউর রহমান বলেন, ‘এই প্রতারণার সঙ্গে আরো কারা জড়িত আছে, তা আমরা তদন্ত করছি। সম্পৃক্ততা পাওয়া সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।