🗓️ সোমবার ● ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ৩:২২ পূর্বাহ্ণ ● ৯ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ইন্দনে রেঞ্জ কর্মকর্তা চন্দ্র শেখর দাস :ঢালচরে প্রকাশ্যে বন কেটে উজার, গাছ যাচ্ছে ইট ভাটায়
ভোলা প্রতিনিধি: ঢালচরে প্রকাশ্যে বন কেটে উজার, গাছ যাচ্ছে ইট ভাটায় সরকার চরাঞ্চলের বনায়ন রক্ষায় জোরালো ভূমিকা রাখলেও প্রতিদিনই এসব সংরক্ষিত বনের গাছ কেটে উজার করা হচ্ছে। তেমনি ভোলার চরফ্যাশনের ঢালচর বনের গাছ প্রকাশ্যে কেটে ফেলছে অসাধু ব্যক্তিরা। সেখান থেকে প্রতিদিন একাধিক ট্রলার বোঝাই কাট যাচ্ছে বিভিন্ন ইটভাটা গুলোতে। তবে এসব গাছ কাটার সাথে স্থানীয় বন বিভাগের কর্মকর্তারা জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। আর বন বিভাগ কর্মীদের দাবি স্থানীয় প্রশাসন এবং ইউপি চেয়ারম্যান জড়িত।
দ্বীপ জেলা ভোলার সর্ব দক্ষিণে চরফ্যাশন উপজেলার সাগড় মোহনায় অবস্থিত ঢালচর ইউনিয়নটি। মেঘনার মাঝে জেগে উঠা চর আর বন দেখে, মন জুড়িয়ে যায় আগত পযর্টকদের। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে শত শত পর্যটকরা আসে প্রাকৃতিক সুন্দর্য দেখার জন্য। এসব বনে হরিণ, শিয়াল, বিভিন্ন প্রজাতির পাখিসহ নানান ধরনের পশু পাখির অভায়াশ্রম রয়েছে। একাধিক চরে বনায়ন থাকায় ঝড় আর জলোচ্ছ্বাস থেকেও রক্ষা পাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ আর গৃহপালিত পশু। সেই বনায়ন উজার করে ফেলছে স্থানীয় ঢালচর রেঞ্জ কর্মকর্তা চন্দ্র শেখর দাস এবং স্থানীয় অসাধু ব্যক্তি নিরব চৌকিদার, কাওসার ফরাজী, শরীফ সওদাগর, এলাহী, সবুজ, জসিম ও রহিমসহ একাধিক অসাধু ব্যক্তিরা বলে অভিযোগ রয়েছে।
গত ৫/৬মাস ধরে প্রতিদিন ১২থেকে ২০ জন মিলে এই বনের গাছ কাটার কাজ করছে। বনের গাছ কাটার কাজ করায় শ্রমিকদের ১ হাজার টাকা করে মজুরি দেয়া হচ্ছে। যার প্রমাণ মিলেছে ঢালচর বন বিভাগের অফিস সংলগ্ন বিশাল বনে ঢুকেই। যাবার সময় তারা গাছ কাটার করাত, জামা, জুতা আর খাবার পানি ফেলে যায়। বনের ভিতর ঢুকতেই নজরে আসে কেটে ফেলে রাখা গাছের মুড়ি (টুকরো) গুলো। বন জুড়েই কেটে ফেলে রাখা গাছ আর গাছের মুড়ি। যা দেখার পরে যে কেউ বুঝতে পারবে কি ভাবে গাছ কেটে উজার করা হচ্ছে বন। এসব কেটে ফেলে রাখা গাছের ভিডিও করার এক পর্যায় বনদস্যুরা বিভিন্ন ধরনের শব্দ আর গাছে ঢাল ভেঙ্গে হামলার প্রস্ততি নিচ্ছে এমন আভাস পেয়ে দ্রুত স্থান ত্যাগ করতে হয়। তবে বনে শ্রমিক হিসেবে কাজ করা ব্যক্তিদের মুখে উঠে আসে জড়িতদের কথা। একই সাথে ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে এসব গাছ।
নিরাপত্তার জন্য নাম না প্রকাশ করার শর্তে বনের গাছ কাটায় অংশ নেয়া দুইজন শ্রমিক জানান, অভিযুক্ত ব্যক্তিরা তাদেরকে মজুরি হিসেবে ১ হাজার করে প্রতিদিন টাকা দিচ্ছে। গত ৫/৬মাস ধরেই বনের গাছ কাটা হচ্ছে। এর সাথে অসাধু ঢালচরের ব্যক্তির সাথে স্থানীয় রেঞ্জ কর্মকর্তা চন্দ্র শেখর দাস জড়িত বলেও তারা জানায়। বন বিভাগ জড়িত বলেই আমরা নিরাপদে গাছ কাটতে পারছি। কারণ বন বিভাগের অফিসের পাশেই এইসব বন। বনের গাছ কাটার পর ট্রলারে বোঝাই করে চরফ্যাশনের বিভিন্ন ইটভাটায় যাচ্ছে বলেও তারা জানান। আর স্থানীয় বাসিন্দারা চায় যারা এসব বনায়ন ধ্বংস করার সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার।
এদিকে ঢালচর রেঞ্জেররেঞ্জ কর্মকর্তা চন্দ্র শেখর দাস এর কাছে ঢালচর বসেই ফোনে জানতে চাইলে তিনি বন কাটার সাথে জড়িতদের জানিয়ে দেন। পরবর্তীতে নিরাপত্তারস্বার্থে সেই স্থান ত্যাগ করা হয়। পরবর্তীতে চন্দ্র শেখর দাস মুঠো ফোনে এই প্রতিবেদকের কাছে সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য বিভিন্নভাবে অনুনয় বিনয় করেন। এছাড়া সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য একাধিক ব্যক্তি নানানভাবে অনুরোধ করেন।
এদিকে ঢালচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম হাওলাদার বলেন, নির্বাচনি তফসিল ঘোষণা হওয়ায় বেশ কিছুদিন ধরে এলাকার বাহিরে। এসব ঘটনা আমার জানা নেই। এ ঘটনার সাথে জড়িত থাকার বিষয় অস্বীকার করে বলেন, প্রশাসন তদন্ত করলে আমি তাদেরকে সার্বিক সহযোগীতা করবো।
অপরদিকে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এসএম কায়চার বলেন, বন কাটছে তারা কাদের লোক? এরা সালামের লোক (চেয়ারম্যান) স্থানীয় প্রশাসনের লোক। বন কাটার সাথে তার রেঞ্জ কর্মকর্তা চন্দ্র শেখর দাস জড়িত আছেন এমন অভিযোগ এর কথা বলতেই তিনি রেগে গিয়ে বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তিনি বলেন, বন কাটা হচ্ছে আমি জানি, সব জানি।ব্যবস্থা নিচ্ছেন না কেন, এমন প্রশ্নে বলেন, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে জানিয়েছি কোনো লাভ হচ্ছে না। এ প্রতিবেদক বক্তব্য নেয়ার সময় ঢালচরে বন কাটা হচ্ছে এমন খবর পেয়ে গাছ কাটার জন্য আনা করাতসহ অন্য সামগ্রী জব্দ করান বিভাগীয় বন কর্মকর্তা। তবে কোনো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেননি।
হাসান চৌধুরী গ্রুপ অব কোম্পানিজ লিঃ এর একটি প্রতিষ্ঠান