কক্সবাজার সংবাদদাতা: কক্সবাজার জেলার উত্তর বনবিভাগের বাঘখালী রেঞ্জের বাঘখালী বিটের প্রায় দশ একর সামাজিক বনায়ন কেটে উজাড় করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে খোদ বাঘখালী বিট কর্মকর্তা রবিউল ইসলামের বিরুদ্ধে। কাউয়ারখোপ উপজেলার কলারঝিরির শুকরেরতলী সংরক্ষিত বনাঞ্চলের প্রায় দশ একর জায়গার হাজার হাজার গাছ কেটে ফেলা হয়েছে।
গাছ কাটার পর গাছের গুঁড়ি নিশ্চিহ্ন করতে পাহাড়ে ধরিয়ে দেয়া হয়েছে আগুন। গত শনিবার সকালে সরজমিন দেখা যায়, রামু উপজেলার কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের কলারঝিরির সংরক্ষিত বনভূমির পাহাড়ি নিচু জমিতে শত শত একরজুড়ে করা হয়েছে তামাক চাষ। অভিযোগ আছে, বাঘখালী বিট কর্মকর্তা টাকার বিনিময়ে স্থানীয় ভিলেজার ও বাসিন্দাদের তামাক চাষ করতে বর্গা দিয়েছেন সংরক্ষিত বনভূমির শত শত একর জমি। পাশাপাশি সরকারি সামাজিক বনায়ন প্রকল্পের আকাশমনি, মির্জা গাছসহ হাজার হাজার গাছ কাটা দেখা যায়। অনেক গাছ কাটার পর এখনো ফেলে রাখা হয়েছে এখানে।
সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে সরে পড়েছেন তামাকচাষিরা ও গাছ কাটায় জড়িতরা। হেডম্যান আব্দুস ছালাম বলেন, কিন্তু দুঃখের বিষয় খোদ বিট কর্মকর্তা রবিউল বন সংরক্ষক হয়ে প্রকাশ্যে কিছু বনদস্যুদের সঙ্গে নিয়ে প্রায় দশ একর সংরক্ষিত বনভূমির গাছ কাটিয়েছেন, পাশাপাশি টাকার বিনিময়ে সংরক্ষিত বনভূমিতেই তামাক চাষ করার অনুমতি দিচ্ছেন তিনি। আমরা তিনজন হেডম্যান এসব বনভূমির দেখাশোনা করি। এখন আমরা হেডম্যান হয়েও নিরুপায়। বিট কর্মকর্তা রবিউলের বিরুদ্ধে কথা বললে তিনি আমাদের বন মামলার ভয় দেখান। তিনি নিজে বাদী হয়ে বনবিভাগের পক্ষে সংরক্ষিত বনভূমি রক্ষায় আদালতে মামলা করেছেন বলে জানান।
এদিকে, দশ একর জায়গার গাছ কেটে উজাড় ও সংরক্ষিত বনভূমিতে তামাক চাষে তার বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে বিট কর্মকর্তা রবিউল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমি কেন বনবিভাগের গাছ কাটবো, দুষ্কৃতিকারীরা হয়তো এই গাছগুলো কেটেছে। প্রায় দশ একর বনভূমির হাজার হাজার গাছ কাটলেও কারা এই গাছ কেটেছে তা নিয়ে তিনি কিছু জানেন না বলেও জানান। তিনি আরও বলেন, সংরক্ষিত বনভূমিতে যারা তামাক চাষ করে এদের হাত অনেক লম্বা। আমরা তাদের তামাক চাষ করতে নিষেধ করলেও শোনে না।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন’র (বাপা) কক্সবাজার জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক কলিম উল্লাহ বলেন, শুধু রামুতে নয়, কক্সবাজার জেলার মহেশখালী, টেকনাফ ও ঈদগাঁওতে অনেক বন রক্ষকরাই বন ধ্বংসে মেতে উঠেছে।
স্থানীয় বনদস্যু-পাহাড়খেকোদের সঙ্গে আঁতাত করে তারা বন রক্ষা না করে ধ্বংস করছে। আমরা ইতিমধ্যেই সুনির্দিষ্ট প্রমাণসহ অনেক বন বিভাগের কর্মকর্তার বিরুদ্ধেই বনবিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। রক্ষকই যদি ভক্ষক হয়ে ওঠে তাহলে আসলে বনভূমি রক্ষা করা কঠিন।