আমতলী (বরগুনা) সংবাদদাতা: বরগুনার আমতলী উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের বাঁশবাড়িয়া নদীর চরে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের ছৈলা, কেওড়া ও বাইন গাছ কেটে উজাড় করে দিচ্ছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা।
শনিবার রাতে উপজেলা প্রশাসন ও বন বিভাগ কর্তৃপক্ষ এই বনাঞ্চলের ছৈলা, কেওড়া ও বাইন গাছ জব্দ করে। বন উজাড় করার এ ঘটনায় এলাকা সাধারণ মানুষের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। কিন্তু প্রভাবশালীদের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না।
জানা গেছে, আমতলী উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ৩০০ ফুট প্রস্থের বাঁশবাড়িয়া নদীটি পলি জমে এখন মরা নদীতে পরিণত হয়েছে। এই নদীর দৈর্ঘ্য ঠিক থাকলেও ভরাট হয়ে প্রস্থ ঠেকেছে মাত্র ৬০ ফুটে। নদীর দুই পাশে পলি জমে চর জেগে উঠেছে। প্রাকৃতিকভাবেই ওই চরে সৃষ্টি হয়েছে ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল। গত ৪০ বছরে পলি জমে সৃষ্টি হওয়া চরে হাজার হাজার প্রকৃতিবান্ধব ছৈলা, কেওড়া ও বাইনসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছের জন্ম হয়েছে। শুরুতে স্থানীয় কারো নজরে না এলেও বর্তমানে এই বনের গাছের ওপরে নজর পড়েছে স্থানীয় প্রভাবশালীদের। গত দুই বছর ধরে তারা দেদারসে গাছ কেটে নিয়ে গেছে।
বন বিভাগ কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। গত কয়েক দিন ধরে ওই বনের ছৈলা, কেওড়া ও বাইন গাছসহ দুই শতাধিক কেটে মজুদ করছেন প্রভাবশালীরা। এমনভাবে গাছ কাটা হচ্ছে যে বন উজাড় হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কিন্তু ভয়ে স্থানীয়রা মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না। শনিবার সন্ধ্যায় ওই গাছ ট্রলারযোগে বরিশাল নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেয়া হলে স্থানীয় লোকজন আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনিরা পারভীনকে জানান। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনিরা পারভীন ঘটনাস্থলে বন বিভাগ ও ভূমি অফিসের লোকজন পাঠান। প্রশাসনের লোকজনের উপস্থিতি টের পেয়ে ট্রলারের মাঝিমাল্লারা পালিয়ে যায়।
পরে স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় ট্রলার থেকে ওই গাছ উদ্ধার করে ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম সিকদারের জিম্মায় রেখে আসা হয়। এ খবর পেয়ে বনখেকোরা সটকে পড়ে।
উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের অফিস বাজার ব্রিজ সংলগ্ন বাঁশবাড়িয়া নদীর চর সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, নদীর পশ্চিম পাশের চর থেকে প্রায় ২০০ মিটার বনের ছৈলা, কেওড়া ও বাইনসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কেটে নিয়ে গেছে বন খেকোরা। করাত ও কুঠার দিয়ে কাটা গাছের মূলের অংশ পড়ে আছে। বন খেকোদের তাণ্ডবে ছোট গাছও রক্ষা পায়নি। তারা গাছ কেটে বন পরিষ্কার করে দিয়েছে। আসলাম স-মিল মালিক শাহ আলম মৃধা বলেন, গত চার দিন ধরে বনের গাছ কেটে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। স্থানীয় দেলোয়ার হোসেন গাজী ও সোহরাফ গাজী বলেন, বনের গাছ কেটে উজাড় করা হয়েছে। বন উজাড় করে জমি দখল করা হবে বলে বলে শুনেছি।
কাঠ ব্যবসায়ী শিপন মিয়া বলেন, আমার কাছে বনের গাছ কেটে জ্বালানি কাঠ হিসেবে বিক্রি করা হয়েছে। আমি ওই গাছ কিনেছি মাত্র।
ট্রলার শ্রমিক ফোরকান বলেন, ট্রলারে ছৈলা, বাইন ও কেওড়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির জ্বালানি কাঠ ভরেছি।
ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম সিকদার বলেন, বনাঞ্চলের গাছ আমার কাছে জিম্মায় আছে। আমতলী উপজেলা ভারপ্রাপ্ত বন কর্মকর্তা রুহুল আমিন বলেন, প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের গাছ উদ্ধার করে স্থানীয় ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম সিকদারের জিম্মায় রেখে এসেছি। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনিরা পারভীন বলেন, জব্দকৃত গাছ নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করা হবে। তিনি আরো বলেন, যারা এ ঘটনার সাথে জড়িত তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।