
ইফতেখার চৌধুরী: চট্টগ্রামের ফৌজদারহাট এলাকায় অভিযান চালিয়ে কক্সবাজারের মহেশখালী থানার এক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। এরপর ওই আসামিকে আদালতে সোপর্দ করার আগে তার অপরাধ স্বীকার করিয়ে একটি ভিডিও ফেসবুকে শেয়ার করেছেন মহেশখালী থানার ওসি প্রণব চৌধুরী।
যদিও আইনজীবী ও ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা বলছেন, পুলিশ কোনো অবস্থাতেই অভিযুক্তের স্বীকারোক্তি আদায়ের ছবি বা ভিডিও প্রকাশ করতে পারে না। কাউকে অপরাধী বলে সম্বোধন করা এবং গ্রেপ্তারের পরপরই স্বীকারোক্তি আদায়ের ভিডিও করা ও তা প্রচার মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
এর আগে গতকাল বুধবার (২২ মার্চ) সীতাকুণ্ড থানার ফৌজদারহাট এলাকা থেকে আব্দুর রহিম (৪২) নামের এই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে মহেশখালী থানা পুলিশ। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মহেশখালীর হোয়ানক এলাকার কালালিয়াকাটা ঢেউয়াখালী পাহাড়ের মাটিতে পুঁতে রাখা ১টি অস্ত্র ও কিরিচ জব্দ করা হয় বলে পুলিশ জানায়।
গত ১০ জানুয়ারি মোবারক নামে এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে হাত বিচ্ছিন্ন করার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে আব্দুর রহিমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
তাকে গ্রেপ্তারের পর, মহেশখালীর ওসি প্রণব চৌধুরী বুধবার রাতে তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি থেকে একটি ভিডিও প্রকাশ করেন যেখানে তাকে আরও তিন পুলিশ কর্মকর্তার সাথে অভিযুক্ত আব্দুর রহিমকে একজন সন্ত্রাসী হিসাবে পরিচয় দিতে দেখা যায়।
তখন পুলিশ কর্মকর্তারা ধারালো অস্ত্র দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে গ্রেপ্তার আসামির ‘স্বীকারোক্তি’ নেন, তিনি কীভাবে অপরাধ করেছেন সে বিষয়ে।
সাত মিনিটের ভিডিওতে ওসি প্রণব চৌধুরী নিজের এবং সেখানে উপস্থিত অন্যান্য কর্মকর্তাদের পরিচয়ও দেন। পুরো ভিডিও জুড়ে, প্রণব চৌধুরী ঘটনার জন্য আবদুর রহিমকে দায়ী ব্যক্তি হিসেবে উল্লেখ করেন। তাকে বলতে শোনা যায়, আবদুর রহিমের বিরুদ্ধে চারটি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে, যার মধ্যে একটি ২০০৯ সালে একটি ধর্ষণের মামলা রয়েছে।
ভিডিওটি ফেসবুকে আপলোড হওয়ার পরপরই শুরু হয় বিরূপ মন্তব্য। ঘটনাটিকে হাইকোর্টের আদেশের লঙ্ঘন বলে মন্তব্যের জবাবে ওসি প্রণব চৌধুরী লিখেছেন, ভিডিওটি শেয়ার না করলে খবর পাবেন কীভাবে?
হাইকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ‘হাইকোর্ট বিভাগের একটি রায় আছে যে কোনো মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তি দোষী সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত নির্দোষ। সোশ্যাল মিডিয়ায় আসামির ভিডিও বা ছবি প্রকাশ করে কাউকে দোষী প্রমাণ করা আইনের লঙ্ঘন।
বাংলাদেশ পুলিশ সোশ্যাল মিডিয়া এবং ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারের নির্দেশিকা, ২০২২-এ উল্লেখ আছে, তদন্ত বা বিচারাধীন বিষয়গুলি সম্পর্কে কোনও ভিডিও, স্থির চিত্র, অডিও বা তথ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করা যাবে না।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশকে তাদের আত্মপ্রচারের জন্য জনগণের অধিকার লঙ্ঘন করতে দেখা যাচ্ছে। মূলত পুলিশ বীরত্ব দেখাতে এসব করছে।’
এ বিষয়ে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এটি অন্যায় হয়েছে। এ বিষয়ে হাইকোর্ট বিভাগের সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। আমরা এখন এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।